বয়স অনুযায়ী শিশুকে কি খাওয়াবেন?


জন্মের পর বাচ্চার জন্য মায়ের দুধের বিকল্প নেই। মায়ের দুধই উত্তম খাদ্য। দুধ খাওয়ানোর জন্য কোন সময় নির্ধারণের দরকার হয় না। বাচ্চার চাহিদা অনুযায়ী খাওয়ানো যায়। কিন্তু শিশু যখন বড় হতে থাকে তখন মায়ের দুধের পাশাপাশি তার অন্য খাবারের প্রয়োজন হয়। শিশুর পূর্ণ ৬ মাস হবার পর শিশুর জন্য পরিপূরক খাবার দেওয়া উচিত।
শিশুর খাদ্যতালিকায় পুষ্টিকর এবং সুষম খাদ্য রাখা অপরিহার্য। বড়দের তুলনায় বাড়ন্ত শিশুদের খাবার অধিক পুষ্টিসমৃদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। বাড়ন্ত বয়সে শিশুদের পুষ্টি উপাদান  বিশেষ করে  ভিটামিন এবং মিনারেলের প্রয়োজন পড়ে যা তার মেধা বিকাশে সাহায্য করে। বর্তমান সময়ে শিশুরা ফাস্ট ফুডের প্রতি বেশি ঝুঁকে থাকে, তাই এইসময় শিশুদের খাবারে পুষ্টিকর খাবার রাখা আরো বেশি প্রয়োজন হয়ে পড়ে। 

■ ৬- ৭ মাস বয়সের শিশুর খাদ্য ৫-৬ মাস বয়স হলেই বুকের দুধের পাশাপাশি শিশুকে পরিপূরক খাবার খাওয়ানো শুরু করা উচিত ৷এর চেয়ে দেরি হয়ে গেলে শিশুরা খাবারের স্বাদ বুঝে যায় এবং খেতে চায় না।
এ সময দুধের সঙ্গে কলা চটকিয়ে অথবা দুধ দিয়ে সুজি রান্না করে শিশুকে খাওয়ানো আরম্ভ করা যায় ৷
চালের গুঁড়া , আটা , ইত্যাদি সিদ্ধ করে দুধ দিয়ে পাতলা করে রান্না করে শিশুকে দেয়া যেতে পারে ৷
মৌসুমি ফল যেমন পাকা কলা , পাকা পেঁপে ইত্যাদি ফল শিশুকে দেওয়া যায় ৷

■৭-ঌ মাস বয়সের শিশুর খাদ্য এই বয়সে শিশু কিছুটা পরিপক্ব হয় এবং ফল ও অন্যান্য শস্যজাতীয় খাবার খেতে পারে ৷এ সময় খাবারের ক্যালোরির চাহিদা বাড়ানো দরকার। খাদ্যে জলের পরিমাণ কমিয়ে কিছুটা ঘন থকথকে খাবার দেয়া যায়। এ সময় শিশু নিজের হাতে ধরে খেতে চেষ্টা করে। রঙ এর প্রতি আকর্ষণ বাড়ে, খাবারের প্রতিও আকর্ষণ বাড়ে। 
তাই সিদ্ধ আলু , মৌসুমি সবজি সিদ্ধ করে চটকিয়ে শিশুকে খাওয়ানো যায় ৷
যেমন : গাজর , মটরশুটি , বরবটি , শিম , পটল , পেঁপে ইত্যাদি ৷
শিশুর খাবার সামান্য তেল দিয়ে রান্না করে শিশুকে খাওয়াতে হবে ৷

■ঌ-১২ মাস বয়সের শিশুর খাদ্য এই বয়সে প্রায় বড়দের মতো খাবার শিশুকে খাওয়ানো যায় ৷
তাই শিশুর খাবার আরো ঘন করতে হবে এবং পরিমাণে ও বাড়াতে হবে ৷
নরম খিচুড়ি , সিদ্ধ ডিম , সিদ্ধ সবজি ও আলু , ডাল-ভাত , দুধ , রুটি , দই , ইত্যাদি শিশুর জন্য খুবই উপকারী এবং পুষ্টিকর ৷
এ সময় শিশুকে ৪-৫ বার খাওয়ানো দরকার ৷

■ ১২- ১৮ মাস বয়সের শিশুদের এই সময়ে বেশ কয়েকটা দাঁত উঠে যায়। ফলে যেকোনো ছোটো খাবারের  টুকরো দেওয়া যেতে পারে।
যদি কোনো খাবার পেস্ট করে খাওয়ানোর অভ্যাস থাকে তাহলে তা এখনই বন্ধ করতে হবে। শিশু এই সময় মোটামুটি চিবোতে পারে ,তাই  হালকা স্ম্যশ করে খাবার দিতে হবে।১ থেকে দেড় বছরের বাচ্চাদের দিনে ৩ বার ভারী খাবার ও  দুই  বার  টিফিন দিতে হবে। এর মাঝে বাচ্চার প্রয়োজন অনুযায়ী ব্রেস্টফীড চলবে। UNICEF এর নির্দেশ অনুসারে বাচ্চাকে ২ বছর অবধি ব্রেস্টফীড করানো যায়।

■১৮ মাসের বেশি বয়সের শিশুরা বাড়ির তৈরি প্রায় সব খাবারই খেতে পারে। তাই বাড়ির তৈরি তেল ঝাল মসলা ছাড়া সব খাবার দেওয়া যায়।

★ অবশ্য করণীয়?
১. খাবারকে সুস্বাদু করতে হবে, বাড়ির  মা-দিদিমারা জানেন বাচ্চার খাবারকে কীভাবে স্বাদু করতে হয়। খাবারকে যতটা সম্ভব থকথকে করতে হবে, যাতে কম গড়ায় ।পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা সবসময় বজায় রাখতে হবে। 
২. একবার দু’বার শিশু খাবার না খেলেই তা বাতিল করা যাবে না। পরপর আটবার যদি শিশু একই খাবার না খায়, তবেই বাতিল করবেন। 
৩. শিশুকে খাইয়ে বমি করানো অত্যন্ত বদভ্যাস। যেটুকু খেতে ইচ্ছুক সেটুকু খাইয়ে বিশ্রাম দিয়ে কিছু সময় পর আবার দিতে হবে। 
৪. সব খাবারই ভালো আবার সব খাবারই মাত্রাতিরিক্ত বা অতিরিক্ত মশলাদার হলে খারাপ। তাই সব রকম খাবারই মিলিয়ে মিশিয়ে শিশুকে খাওয়াতে হবে, সেটাই হবে শিশুর সুষম খাদ্য। যা সহায়ক হবে শিশুর সর্বোত্তম বৃদ্ধি বিকাশে।
৫. পরিবারের সকলের সাথে বসিয়ে খাওয়ালে খাবারের প্রতি আগ্রহ বাড়ে। 
৬. বাবা-মায়েরা যেসব খাবার পছন্দ করেন না সেগুলোর বিষয়ে নেতিবাচক কথাবার্তা শিশুদের সামনে এড়িয়ে যেত হবে।

■ স্কুল টিফিন কেমন হবে?
স্কুলে থাকতে হয় অনেকটা সময়। ওই সময় পুষ্টি চাহিদার যাতে কোনো ঘাটতি না হয়, তাই স্বাস্থ্যসম্মত পুষ্টিকর টিফিন দিতে হবে। বাচ্চাদের অনেক ধরনের পছন্দ-অপছন্দ থাকে। তাই মাকে এমনভাবে টিফিন তৈরি করতে হবে, যাতে তা থেকে তার প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাওয়ার পাশাপাশি বাচ্চা আনন্দও পায়।সঠিক টিফিন নির্বাচনে  যে বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে:
* অল্প পরিমাণে কিন্তু পুষ্টি উপাদান বেশি আছে—এমন খাবার টিফিনে দিতে হবে।
* এমন কোনো খাবার দেওয়া যাবে না, যেগুলো ঠান্ডা হলে শক্ত হয়ে যায়।
* যেকোনো টিফিনের সঙ্গে একটু শসা বা শুকনো ফল ইত্যাদি দিলে বাচ্চাদের ফল খাওয়ার অভ্যাস তৈরি হবে।
* খাবারকে সুন্দর করে টিফিন বাক্সে সাজিয়ে দিতে হবে।
 * টিফিনে রং, টেস্টিং সল্ট, কেনা বিস্কুটের গুঁড়া, অতিরিক্ত লবণ দিয়ে বানানো টিফিন দেওয়া যাবেনা।
* ঘরে তৈরি স্বাস্থ্যকর টিফিন দিতে হবে কোনো কেন খাবার চলবে না।
● ঘরে তৈরি স্বাস্থ্যকর টিফিন :
ঘরে তৈরি কেক, প্যানকেক, খিচুড়ি, রুটির সঙ্গে জ্যাম,, সবজি রুটি , স্যান্ডউইচ, হালুয়া, , মাছের কাটলেট, ঘরে তৈরি ফ্রায়েড রাইস, গ্রিল করা আলু, তাজা ফল, বিস্কুট (রকমারি),ভেজিটেবল রোল ইত্যাদি টিফিনে দেওয়া যেতে পারে।তবে, মনে রাখবেন, ৩০ দিনের মধ্যে ২৪ দিনই শিশুকে টিফিন দিতে হবে। 

Comments