রোগা হওয়ার কঠিন উপায়

রোগা হতে হলে, ওজন কমাতে শারীরিক পরিশ্রমের পাশাপাশি নজর রাখতে হবে ডায়েটে। ওজন বেড়ে গেছে বলে অর্ধেক খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে ওজন কমাবেন এই ভুলটা একেবারেই করবেন না।  এতে কিন্তু আরও হিতে বিপরীত হবে।

■কিটো ডায়েট : 
এই ডায়েটে প্রোটিন, ফাইবার আর ক্যালশিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকে। এগুলি শরীরের মেটাবলিক রেট বাড়ায় এবং ফ্যাট পোড়াতে সাহায্য করে। তাই আপাতদৃষ্টিতে ‘আনহেলদি’ খাবার খেয়েও দ্রুত ওজন কমে।কিটো ডায়েটের মূলমন্ত্র সহজ৷ খাবারদাবার থেকে কার্বস বাদ দিয়ে বেশি করে ফ্যাট খেতে হবে। ভাত-রুটি খাওয়া যাবে না, কিন্তু চিকেন-মাটন-মাছ-ডিম-মাখন-ঘি-চিজ সব চলবে। পছন্দের খাবারকে গুডবাই বলে শাকপাতা চিবোতে হয় না বলেই হয়তো কিটো ডায়েট জনপ্রিয়।
কিটো ডায়েট মানতে গেলে সুগার বাদ দিয়ে ফ্যাট জাতীয় খাবার খেতে হবে। মানে চিজ, মাছ, মাংস, মাটির উপরের সবজি, বাদাম, ডিম ইত্যাদি। এই খাবার থেকে লিভার শক্তি সংগ্রহ করবে, ব্রেন সচল রাখবে। ফ্যাট ঝরবে। ঝরঝরে লাগবে।

★তবে কয়েকটা জিনিস মনে রাখা দরকার-
1.কিটো ডায়েটে যেহেতু খুব দ্রুত ওজন কমে, তাই একটানা এই ডায়েট ফলো না করাই ভাল। ভাত-রুটি আমাদের রোজকার খাদ্য। ডায়েট থেকে হঠাৎ সেগুলো সরিয়ে দিলে কিছু সমস্যা হতে পারে। যেমন মাথা ঘোরা, দুর্বল লাগা। তাই সঠিক পরামর্শ নিয়ে প্রথমে 10  দিনের জন্য কিটো ডায়েট ফলো করুন। তারপর চার-পাঁচ দিন বিশ্রাম, স্বাভাবিক খাওয়াদাওয়া। 
2.যাঁরা ইনসুলিন নিচ্ছেন, যাঁরা হাই ব্লাড প্রেশারের রোগী বা যাঁরা সদ্য মা হয়েছেন, কিটো ডায়েট তাঁদের জন্য নয়।
3.কিটো ডায়েট মানতে গেলে খরচ একটু বেশি পড়বে। ভাত-রুটি বাদ দিয়ে শুধু মাছ-মাংসে পেট ভরাতে গেলে দু’এক পিস মাছ বা মাংস খেলে তো চলবে না। সেটা মাথায় রেখে ডায়েট শুরু করুন।

■ উপোসে কসরত:
কখন খাচ্ছেন আর কখন খাচ্ছেন না-এই দুটো ভাগে একটা দিন বা সপ্তাহ ভাগ করে ডায়েট শুরু। যখন খাবেন, সাধারণ খাবার খাবেন। বড়সড় বদল আনার দরকার নেই। কিন্তু যে সময়টা খাবেন না, কিচ্ছু খাবেন না। খেলেও যৎসামান্য। একটু চা বা কফি,  চিনি ছাড়া। এতে খাওয়ার পরিমাণ কমবে আর ক্যালরি বেশি বার্ন হবে।

     রোজ ১৪/১৬ ঘণ্টা উপোস
     সপ্তাহে দু’বার ২৪ ঘণ্টা উপোস
সপ্তাহে দু’দিন (টানা দু’দিন নয়) ৫০০-৬০০ ক্যালরি খেয়ে বাকি পাঁচ দিন স্বাভাবিক পরিমাণে খাওয়া।
জাস্ট ব্রেকফাস্ট স্কিপ করতে পারলেই হবে।এই পদ্ধতি একেবারেই কঠিন নয়।আজ রাত আটটায় ডিনার করে কালকের প্রথম খাবারটা  দুপুর বারোটায়। ব্যস, নিয়ম করে রোজ এটা করলেই হয়ে যাবে।দ্রুত ওজন কমানো শুধু নয়, নিয়মিত উপোসে জিন-হরমোন-সেল সব কিছুর উন্নতি ঘটে। আয়ু বাড়ে। আর হ্যাঁ, এতে বাড়তি এক পয়সা খরচ তো হবেই না, উলটে দিনের একটা ‘মিল’ বাদ দেওয়ায় খাওয়া খরচ কমবে।

★তবে কয়েকটা জিনিস মনে রাখা দরকার- 
যাঁরা ইনসুলিন নিচ্ছেন, যাঁরা হাই ব্লাড প্রেশারের রোগী  তাঁদের জন্য নয়।
উপোস করার দুশ্চিন্তায় যে সময়টা খাচ্ছেন, মাত্রাতিরিক্ত খেয়ে ফেলবেন না।
যারা গ্যাস অম্বলের সমস্যয় ভোগেন তারা এটা করবেন না।

যারা এর কোনোটাই করতে পারবেন না তাদের জন্য রইল বিশেষ ঘরোয়া টিপস-
● ব্রেকফাস্ট বাদ দেবেন না। সকালে ঠিকমতো না খেলে তার প্রভাব সারাদিনের খিদের ওপর পড়বে। ব্রেকফাস্টই সারাদিনের খিদে নিয়ন্ত্রণ করে।
●শুধুমাত্র খিদে পেলেই খান। খেতে ইচ্ছে হলেই যখন তখন যা খুশি খেয়ে নেবেন না।
●ছোট প্লেট ব্যবহার করুন। প্লেট ছোট হলে খাবারের পরিমান কমবে।
●পুষ্টিকর খাবার যেমন ফল, শাকসবজি বেশি খান। বাদ দিন চিপস, মিষ্টি, কোল্ডড্রিঙ্কের মতো খাবার।
●গেলার আগে খাবার ভাল করে চিবিয়ে নিন। এতে পুষ্টিকর উপাদান শরীরে ভাল শোষিত হবে।অন্তত ২০ মিনিট ধরে খান। মনে রাখবেন পেট ভরেছে কিনা সেই সিগনাল মস্তিষ্কে পৌঁছতে ২০ মিনিট সময় নেয়।
●ফল বা মিষ্টি জাতীয় খাবার কখনই খাওয়ার পরই বা খাবারের সঙ্গে খাবেন না।
●খালি পেটে কার্ডিয়ো এক্সারসাইজ হিসাবে দ্রুত সাইক্লিং, সাঁতার, দৌড়, খালি হাতে HIIT ব্যায়াম করতে হবে । এমন ব্যায়াম যাতে হার্টবিট বৃদ্ধি হয় ৩০ মিনিটের জন্য।
●সকালে ব্যায়াম করার আগে ও পরে পর্যাপ্ত পরিমাণে জল খান। অল্প করে বারবার জল পান করতে হবে। শরীরে জলের অভাব হতে দেওয়া চলবেনা।

★◆★ব্রেকফাস্ট থেকে ডিনার পর্যন্ত ডায়েট চার্ট-

ব্রেকফাস্ট: এক কাপ গ্রিন টি সাথে খেতে পারেন ওটস, অথবা মাল্টি গ্রেন সিরিয়ালের মতো কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার। সঙ্গে দু’-তিন রকমের ফল। দুটো ডিমের সাদা অংশ খেতে পারেন।  ব্রেকফাস্টের ঘণ্টাতিনেক পরে অল্প করে ছোলা সেদ্ধ, বা  ডাবের জল খেতে হবে।

লাঞ্চ: দুপুরের খাবারের মেনুতে থাকুক দু’-তিন বাটি তরকারি, সঙ্গে এক পিস মাছ। তবে ভুলেও মাছের মাথা খাওয়া চলবে না। এমনকী, মৌরলা মাছের মাথাও এড়িয়ে চলতে হবে। মাছ-তরকারির পাশাপাশি এক বাটি ঘন ডাল আর শেষ পাতে খাওয়ার জন্য টক দই বা রায়তাও রাখতে পারেন। লাঞ্চের তিন ঘণ্টা পরে অল্প পরিমাণে ছোলা সেদ্ধ, নয়তো মুগ সেদ্ধ বা ইচ্ছে হলে ভুট্টাও খেতে পারেন। 

ডিনার: রাত আট টার মধ্যে রাতের খাবার খাওয়া ভালো। কারণ, সূর্যাস্তের পর থেকে ধীরে-ধীরে আমাদের মেটাবলিজম রেট কমতে থাকে। তাই দেরি করে রাতের খাবার খেলে ওজন (Weight) বাড়ার আশঙ্কা বাড়ে। ডিনারে এক বাটি মাছ বা মাংসের সুপ সাথে একটা রুটি খেলে ভাল। 

    শুধু ডায়েট করলে হবে না ঘড়ি মেপে সময় অনুযায়ী খাবার খেলে তবেই ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে। কোন ব্যক্তির বিপাক হার কেমন হবে তা নির্ভর করে তিনি সারাদিন ঠিক কতটা পরিমাণে খাবার খাচ্ছেন এবং কত সময়ের ব্যবধানে খাচ্ছেন তার উপর।

Comments