কোষ্ঠকাঠিন্য হলে যা যা করণীয়

মলত্যাগে অসুবিধা জীবনের সবচেয়ে বিরক্তিকর বিষয়গুলির মধ্যে একটি। অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাত্রার অভ্যাস যেমন, কাজের ব্যস্ত সময়সূচি, জাঙ্ক ফুড খাওয়া, অনিয়মিত খাবার খাওয়া, কম ফাইবার খাওয়া এবং অপর্যাপ্ত ঘুম সব কারণেই কোষ্ঠকাঠিন্য (Constipation) হতে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্যে যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় তাহলে তা ভীষণ উদ্বেগের কারণ। 
■ কোষ্ঠকাঠিন্য কেন হয়? 
নানাবিধ কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। এগুলোর মধ্যে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ৬টি কারণ হলো—
1.খাবারের তালিকায় যথেষ্ট পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ না থাকা 
2.পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান না করা
3.শুয়ে-বসে থাকা ও শারীরিক পরিশ্রমের অভাব
4.পায়খানার বেগ আসলে তা চেপে রাখা
5.মানসিক চাপ, উদ্বেগ বা বিষণ্ণতা 
6.ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
■ঘরোয়া  প্রতিকার :
কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে ঘরোয়া প্রতিকার সাহায্য করতে পারে। কিছু সহজ প্রতিকার নিচে বিবৃত হল:
●হিং - এক গ্লাস উষ্ণ জলে দু’চিমটে হিং ফেলে দিন  দিনে দু’বার খেতে হবে।
●জোয়ান - এক চা চামচ জোয়ান প্যানের মধ্যে শুকনো ভেজে গুঁড়িয়ে নিতে হবে।  উষ্ণ জলের সাথে পান করতে হবে।
●জল - যদি  কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা খুব বেশি হয় তাহলে দিনের শুরু  এক গ্লাস উষ্ণ জল দিয়ে করতে হবে যা পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করবে। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এবং দিনভর নির্দিষ্ট সময় অন্তর জল পান করতে হবে।
■ কোষ্ঠকাঠিন্য রোধে যেসব খাবার এড়িয়ে চলতে হবে
কোষ্ঠকাঠিন্য রোগীদের কয়েকটি খাবার  যেমন চা, কফি, কোক জাতীয় ড্রিঙ্কস, চকলেট, অত্যাধিক মশলাযুক্ত খাবার, অতিরিক্ত তেল, ঘি, মাখন, ভাজা খাবার না খাওয়া ভাল। মিহি চালের ভাত, ময়দার রুটি, পরাটা, লুচি, পাউরুটি, চিড়া, মুড়ি ইত্যাদি খাবার না খাওয়াই বাঞ্ছনীয়। মদজাতীয় পানীয় খাওয়া নিষেধ। ধূমপানের মাত্রা কমাতে হবে, খুব ভাল হয় একেবারে বন্ধ করলে। রেডমিট মানে খাসী বা গরুর মাংস না খাওয়া ভাল।
■ খাদ্যতালিকা-  সারাদিনে যদি দুই হাজার কিলোক্যলরি খাবার প্রয়োজন হয় তাহলে  ২৮ গ্রাম ফাইবার বা আঁশ জাতীয় খাবার খেতে হবে।আমাদের দেহ এই আঁশকে হজম করতে পারে না। তবে এটি বৃহদান্ত্রে প্রবেশ করে মলত্যাগকে উদ্দীপ্ত করে। আঁশ মলের কোমলতা ও পরিমাণ বৃদ্ধি করে।গমের রুটি, ঢেকি ছাটা চাল, শস্য, শিম বরবটি, মটর বিভিন্ন ধরনের ডাল, শাকসবজি বিশেষত পাতা জাতীয় সবজি ও টাটকা ফলে যথেষ্ট আঁশ থাকে।
বিভিন্ন প্রকার শাক, তরি-তরকারি যেমন: আলু, পেঁপে, গাজর, কাঁচা ডাটা, সিম, বরবটি, লাউ, কুমড়া খেতে হবে। শাক-সবজি কাঁচা ও টাটকা খেলেই বেশী উপকার পাওয়া যায়। আলু, পটল, মূলা খোসা না ফেলে রান্না করাই উত্তম। আপেল খোসাসহ খাওয়াই ভালো। কাগজিলেবু, বাতাবিলেবু, কমলালেবু, টমেটো, আপেল এগুলোতে জৈব এসিড থাকে। এই এসিড অন্ত্রে উত্তেজনা সৃষ্টি করে মলত্যাগে সাহায্য করে। এইজন্য সকালে খালি পেটে এ ধরনের ফল বা ফলের রস খেলে কোষ্ঠবদ্ধতা দূর হয়।শাকসবজি এবং ফল অনেক বেশি খেলে কারো কারো পেট ফাঁপা সমস্যা দেখা দেয় বা পেটে গ্যাস হয়। এজন্য শাকসবজি যখন খাওয়া শুরু করবেন তখন অল্প অল্প করে খাওয়া শুরু করবেন। হঠাৎ করে কখনো শাকসবজি বেশি খাওয়া শুরু করলে পেটের সমস্যায় পড়তে হবে।
পেয়ারা এবং পেঁপে এই দুটি ফল কোষ্ঠকাঠিন্যের রোগীর জন্য অমৃতের মতো। এই ফলগুলো দিনের যে কোন সময় খাওয়া যেতে পারে।আঙ্গুরে কোষ্ঠকাঠিন্য বিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। শুকনো আঙ্গুর অর্থাৎ কিসমিস water ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখলে অন্ত্রকে শক্তি দেয় এবং ডায়রিয়া সহজে আসে।ডুমুর কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার একটি ফল।কিসমিস কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার বৈশিষ্ট্য রয়েছে। ঘুমানোর সময় প্রতিদিন 7 টুকরা শুকনো কিসমিস আঙ্গুর খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য স্থায়ী সমাধান হয়।ইসবগলের ভুসি কোষ্ঠকাঠিন্যে অত্যন্ত উপকারী। 2-3 চামচ ইসবগোল ভুসি দুধ বা জলের সাথে ঘুমানোর সময় খাওয়া উপকারী। 

Comments