স্বাস্থ্য সম্মত জামাই ষষ্ঠীর ভুরিভোজ

           ★স্বাস্থ্য সম্মত জামাই ষষ্ঠী★
রাত পোহালেই জামাই ষষ্ঠী। বাঙালির বিশেষ পার্বণ। আগেকার দিন নিয়ম ছিল, জামাই আদর না করলে মেয়ে সুখী দাম্পত্যজীবন কাটাতে পারে না। তাই জামাইকে আদর-যত্ন করার জন্য জামাইষষ্ঠীর মতো রীতি চালু হয়ে আসছে।এইদিন পঞ্জব্যঞ্জনে সাজিয়ে দেওয়া হয় জামাইয়ের পাত। আম-কাঁঠাল, হরেক রকমের মাছ,মাংস, রকমারি মিষ্টি, দই-সন্দেশ সহযোগে দুর্দান্ত ভুরিভোজএর আয়োজন করা হয়।

পরিবারের শশুর শাশুড়ী সকলের চিন্তা এই গরমে কি রান্না করে জামাই আদর করে যায়! গরমের সবজী, মাছ, ফল, মিস্টি সব কিছু মিলেমিশে স্বাস্থ্যকর জামাই ষষ্ঠীর জন্য রইল বিশেষ টিপস- 

◆বেশি তেলমশলাদার খাবার বা কেনা খাবারের বদলে থাক বাড়িতে শাশুড়ী মার হাতে বানানো সিদ্ধ বা ভাপা নানান পদ । গরমের দুপুরে সব সবজি দিয়ে সুক্ত  করে খেলে ভালো হয়। তরকারী তে দেওয়া যাতে পারে  সামান্য দই। স্বাদ ও বাড়বে আর শরীর ঠাণ্ডা ও হবে।
◆ দুপুরে পাতে সব জামাইরাই ভালবাসে খাসি মাংস খেতে। তবে এই গরমে স্বাদ বদলে ভরসা থাক মাছের উপরেই। ইলিশ ভাপা/ দই পোনা/ ভেটকি পাতুড়ি/ সরষে চিংড়ি/ পাবদা কালিয়া সব পদগুলি কম তেলমসলা দিয়ে রান্না করা যেতে পারে।  সাধারণত ডিম এই দিনে রান্না করে দেওয়া হয়না। তবুও বিশেষ ক্ষেত্রে ডিম সরষে/ ডিমের কালিয়া/ ডেভিল/ ডিম আলুর চোখা পাতে আলাদা স্বাদ আনতে পারে।
◆ দুপুরে ভাতের পাতে অবশ্যই চাই ডাল। ডালের মধ্যে দেওয়া যেতে পারে  সোনা মুগ ডাল/ সবজি দিয়ে মুগ ডাল/ আম দিয়ে মুসুর ডাল/ নারকেল দিয়ে চাপ ডাল। ডালের সাথে পাতি লেবুর রস দিলে স্বাদ গন্ধ দুই বেড়ে যাবে।
◆ শেষ পাতে থাকবে প্রিয় চাটনি। হরেক চাটনি বাড়িতে শাশুড়ী মা র হাতে বানানো। আমের চাটনি/ পেঁপে র চাটনি/ আনারসের চাটনি/  মিক্স ফলের চাটনি/ খেজুর আমসত্বের চাটনি। সাথে পাঁপড়।
◆ ভুরিভোজ মিষ্টি ছাড়া অসম্পূর্ণ। দুপুরে পাতে অবশ্যই চাই দই। সে ঘরে পাতা টক দই হোক বা মিষ্টি লাল দই। আর রসগোল্লা বা রাজভোগ ।

স্পেশাল মেনু- 
1.সকালের জলখাবার খাওয়ার সময় পুরো পেট ভরে খেলে হবে না। কব্জি ডুবিয়ে দুপুরে খেতে হলে সকালের খাবার পেট খালি রেখেই খেতে হবে। কারণ একবার অ্যাসিডিটি হলে গেলে পুরো দিনটাই বৃথা। সকালে 1 টি ছোট বাটি তে চিড়ে দই আম দিয়ে ফলার, সাথে মিস্টি 1 টা খুব ভালবাসলে 2 টি।

2.বেলার দিকে 1 গ্লাস ঠান্ডা শরবত। কাঁচা আম/ তরমুজ/ বেল/লেবুর শরবত বা আখের রস। 

3.দুপুরে খাবার আগে 1 গ্লাস জল খেয়ে তার ১০ মিনিট পর খাওয়া শুরু করতে হবে। তবে দুপুরে খাওয়ার সময়ও ভাত বেশি খেলে হবে না।ভাতের পরিমাণ কমিয়ে মাছ / মাংস অন্যান্য সব পদ পেট ভরে তৃপ্তি করে খেতে হবে। মাছ মাংস সহজে হজম হয়না তাই এই গরমে খাওয়ার সময়ও বুঝে শুনে খাওয়া দরকার ।স্যালাড অবশ্যই থাকবে।

4.গুরুপাক খাওয়া-দাওয়ার সময় একদম জল খাওয়া চলবে না । এতে পেটও যেমন ভরে যাবে, তেমনই আবার বদহজমও হতে পারে। খাবার খাওয়ার 30 মিনিট পর জল খেতে হবে। 

5.বিকেলে একটু ফ্রুট স্যালাড বা ফলাহার হলে জমে যাবে। আম/ কলা/ লিচু/ খেজুর/চেরী/ড্রাই ফ্রুটস সব কিছু দিয়ে ফ্রুট স্যালাড বা কাস্টার্ড ।

6.জামাইষষ্ঠী স্পেশ্যালে মিষ্টি মুখ হবে না এটা হয় না। কিন্তু ভুল করেও মিষ্টি খাবারের শেষে না খেয়ে  সন্ধ্যেবেলা খাওয়া যেতে পারে। । তবে লোভে পরে সব মিষ্টি খেয়ে ফেলা যাবেনা। 

7.রাতের বেলা গরম ফুলকো লুচি বা পরটা । পরটা স্বাদ অনুপাতে বিভিন্ন ভাবে বানান যেতে পারে । যেমন- আলু/ মেথি/ ডাল/ গাজর/ জোয়ান ইত্যাদি। সাথে কাশ্মীরি আলুর দম/ পনির রেসালা / এঁচোরকোপ্তা  কারী/ ফুলকপির রোস্ট/ কিমা মটর/ ছানার তরকারি। সাথে মিষ্টি । দুধ মালাই/ ছানার পায়েস/ রসমালাই। 

         বেশি দিন ধরে জামাই ষষ্ঠী খেতে চাইলে কম খাওয়ার কোনো বিকল্প নেই। নিজের শরীর স্বাস্থ্য বুঝে সব খাবার খাওয়া দরকার। জামাই আদর করতে গিয়ে নিজের মেয়ে কে ভুললে চলবে  না।  তাই শুধু জামাই ষষ্ঠী না মেয়ে ষষ্ঠী বা বৌমা ষষ্ঠী ও আনন্দ করে ঘরে ঘরে পালন করুন।

Comments